March 10, 2025, 3:34 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
২৬ বছর পরও যশোরের ভয়াবহ উদীচী হত্যাকাণ্ডের বিচার অধরাই রয়ে গেছে। দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এই হামলাটি বাংলাদেশের প্রথম জঙ্গি হামলা হিসেবে বিবেচিত হলেও আইনি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধী শাস্তি পায়নি।
উচ্চ আদালতে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হলেও গত ১৫ বছর ধরে কোনো অগ্রগতি হয়নি। নিহতদের পরিবার, আহত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা ন্যায়বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
আজ (বৃহস্পতিবার) ভয়াবহ এই ঘটনার ২৬তম বার্ষিকী।
সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত হন এবং ২৫০ জনেরও বেশি নিরীহ মানুষ আহত হন। নিহতরা হলেন—নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, নূর ইসলাম, ইলিয়াস মুন্সী, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম মিলন, মোহাম্মদ বুলু, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম পিন্টু ও বাবু রামকৃষ্ণ।
নিহতদের মধ্যে শাহ আলম মিলন, রতন কুমার বিশ্বাস ও বাবু রামকৃষ্ণ কুষ্টিয়ার বাসিন্দা ছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির দেওয়া ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে মামলার সব আসামি খালাস পেয়ে যান। পরে সরকার উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে এরপর কোনো শুনানি হয়নি এবং মামলাটি আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে।
জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের কাছে উদীচী বোমা হামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিলেও মামলায় কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
২০১০ সালের ৮ জুন উদীচী মামলার আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির পর আসামিদের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিশ জারির আদেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্ট থেকে জারি করা সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ২০১০ সালের ২৬ জুলাই যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছায়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে খালাস পাওয়া আসামিরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। কিন্তু এরপর আর আপিল শুনানি হয়নি, ফলে মামলাটি আইনি জটিলতায় ঝুলে আছে।
আহত ও স্বজনদের আর্তনাদ/
উদীচী হামলায় বেঁচে যাওয়ারা এখনো ন্যায়বিচার চান।
হামলায় দুই পা হারানো নাহিদ বলেন, “দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। আমরা হামলাকারীদের বিচার চাই।”
এক পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, “এক বছর, দুই বছর নয়—২৬ বছর হয়ে গেল, কিন্তু দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি।”
তিনি বলেন, “সরকারকে আন্তরিকভাবে এই মামলার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও একই দাবি জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়ার মিলপাড়া এলাকায় নিহত রামকৃষ্ণের পরিবার ন্যায়বিচারের দাবিতে অনড়। একই দাবি জানিয়েছেন আমলা পাড়ার রতন বিশ্বাসের পরিবার এবং চাউলের বর্ডার এলাকার শাহ আলমের পরিবার।
২০০৮ সালের ৬ মার্চ কুষ্টিয়া পৌরসভার অর্থায়নে শহরের প্রধান সড়কে কুষ্টিয়ার তিন নিহত সাংস্কৃতিক কর্মীর স্মরণে ‘রাম-রতন-শাহ আলম স্কয়ার’ স্থাপন করা হয়।
বার্ষিক কর্মসূচি/
উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
সকালে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান,
উদীচী কার্যালয়ে আলোচনা ও স্মরণসভা,
সন্ধ্যায় শহীদ বেদিতে মশাল প্রজ্বালন।
Leave a Reply